
লেবাননে বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এর আগে লেবানন থেকে ইসরায়েলে একাধিক রকেট হামলা হয়।
নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে এত বড় মাত্রায় সংঘাতের ঘটনা ঘটল। খবর বিবিসির।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ লেবাননে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া ও রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর একাধিক রকেট লঞ্চার ও একটি কমান্ড সেন্টারে হামলা চালিয়েছে।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, হামলায় এক শিশুসহ তিনজনের প্রাণ গেছে। আর আহত হয়েছেন অন্তত আটজন।
লেবাননে হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি সশস্ত্র দল সক্রিয়, তবে ইসরায়েলে হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। এরমধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানায়, তারা এই হামলায় জড়িত নয়, বরং যুদ্ধবিরতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে।
নতুন এই উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মধ্যস্থতায় হওয়া নাজুক যুদ্ধবিরতির ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করল। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছিল এই যুদ্ধবিরতি।
গত কয়েক দিনে ইসরায়েল যখন গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও তীব্র করল, তখন শনিবারের এই হামলা হলো। হামাস হিজবুল্লাহর মিত্র।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, শনিবার ভোরে উত্তর ইসরায়েলের মেতুলা শহরে তিনটি রকেট প্রতিহত করা হয়েছে। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েল শনিবার সকালে প্রথম দফা হামলা চালায়। এরপর সন্ধ্যায় আরও এক দফা হামলা চালায়।
লেবাননের সেনাবাহিনী জানায়, তারা দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি অস্থায়ী রকেট লঞ্চার নিষ্ক্রিয় করেছে। হামলার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
লেবাননে সক্রিয় প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানায়, তারা ইসরায়েলে হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। ১৪ মাসের সংঘাতের অবসান ঘটানো যুদ্ধবিরতি মেনে চলছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যেন ইসরায়েলে হামলা চালাতে না পারে, সেজন্য লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করবে।
অন্যদিকে হিজবুল্লাহকে তাদের যোদ্ধা ও সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে হবে, আর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যুদ্ধের সময় দখল করা অঞ্চল থেকে সরে যাবে।
কিন্তু ইসরায়েল প্রায় প্রতিদিনই হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করা স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং বলে আসছে, গোষ্ঠীটি যেন পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হামলা চালিয়ে যাবে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনো দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি স্থানে অবস্থান করছে। লেবানন সরকার বলছে, এটি তাদের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং চুক্তির শর্ত ভঙ্গ।
শনিবারের হামলা লেবানন সেনাবাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। কারণ, তারা দক্ষিণে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, যেখানে হিজবুল্লাহর দীর্ঘদিনের প্রভাব ও জনসমর্থন রয়েছে।
জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসা লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন বলেন, দেশে কেবল সরকারেরই অস্ত্র রাখার অধিকার থাকা উচিত। অনেকেই এটিকে হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডারের বিরুদ্ধে বার্তা হিসেবে দেখছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এর পরদিন হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৫
আরএইচ