![](https://reviewer4you.com/wp-content/uploads/2025/02/1739469812.hasina.jpg)
ঢাকা: জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানো শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিতে আগেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন। এবার তার রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) তদন্ত প্রতিবেদন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় হাসিনার সরকার ও তার দলের নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছে জাতিসংঘ। যেখানে তারা বলেছে, অভ্যুত্থান চলাকালে ১৪ শতাধিক মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও আওয়ামী লীগ নৃশংসতা চালিয়েছে। আর এই হত্যাযজ্ঞে সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন খোদ শেখ হাসিনাই।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন নিয়ে খবর প্রচার করেছে বিবিসি, এএফপি, সিএনএন, রয়টার্স, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যম। এ নিয়ে দেশ ছাড়িয়ে গোটা বৈশ্বিক রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ‘হাসিনার সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়েছে’- এমন তথ্য বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এমনকি শিশুসহ নিরীহ নাগরিকদের হত্যায় জড়িত অপরাধীরা যেন দায়মুক্তি না পায়, সে বিষয়টিতে জাতিসংঘ জোর দেওয়ায় খোদ আওয়ামী লীগেই নানা ধরনের হিসাব-নিকেশ তৈরি হয়েছে।
রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ দিনের লুটপাট, গুম-খুন, বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনা নিজেই তার নিজের ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির কবর রচনা করেছিলেন। গদি টেকাতে নৃশংসতার চূড়ান্ত রূপ দেখিয়েছিলেন তিনি। যদিও জনরোষে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এবার হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘ। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন শেখ হাসিনার ‘রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক’ ঠুকে দিয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের প্রকাশের সময়টায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, বহু বছর বন্দি ছিলেন এমন কয়েকজন ভুক্তভোগীকে নিয়ে হাসিনা সরকারের গোপন টর্চার সেল কুখ্যাত ‘আয়নাঘর’ পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তারা হাসিনার বন্দিশালার ভয়াবহ স্মৃতিচিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন। বন্দিরা স্মৃতিচারণ করেন তাদের লোমহর্ষক সেসব দিন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের দিন আয়নাঘরের আলামত সামনে আসায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে হাসিনার আওয়ামী লীগ। বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরে ‘সুযোগের অপেক্ষায়’ ঘাপটি মেরে থাকা তার দোসররাও পড়েছে চাপের মুখে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন, গোপন বন্দীশালার চিত্র দেশের জনগণের মনে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা পড়েছে ইমেজ সংকটে, যার পরিণতিতে তাদের সমর্থনও কমবে মারাত্মকভাবে। তাছাড়া আগে থেকেই জুলাই-আগস্ট গণহত্যায় জড়িতদের বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষের দাবি উঠেছে। ফলে, এটা অনুমেয় যে আগামী দিনগুলোয় শেখ হাসিনার রাজনীতিতে ফেরা প্রায় পুরোপুরি অসম্ভব। নৃশংসতায় অভিযুক্ত ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগেরও রাজনীতিতে ফেরা অত্যন্ত কঠিন হবে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ১৪শ’ মানুষ, সমন্বয়ে ছিলেন খোদ হাসিনা
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে ছাত্র-জনতার ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনসহ মাঠে থাকা সব বাহিনী বলপ্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের সময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) মতো গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আন্দোলনকারীর সহিংস দমনে সরাসরি জড়িত থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। গোয়েন্দা বাহিনীগুলো শিশুসহ নির্বিচারে আটক, গুম, নির্যাতন, তথ্য বের করা, স্বীকারোক্তি আদায়ের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টে ১ হাজার ৪০০ মানুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো সামরিক অস্ত্র ও শটগানের গুলিতে মারা যান। হাজারো ছাত্র-জনতা গুরুতর ও চিরতরে আহত হয়েছেন। ১১ হাজার সাতশর বেশি মানুষকে র্যাব ও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। নিহতের মধ্যে ১১৮ জনই শিশু। পুলিশসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে টার্গেট কিলিং, ইচ্ছা করে পঙ্গু করা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানুষিক নির্যাতন এবং অন্যান্য বলপ্রয়োগ করেছে। আন্দোলনের শুরুতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সদস্যরা নারী ও মেয়েদের ওপর হামলা করেছে– এগুলো যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ছিল। এগুলোকে প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বলছে জাতিসংঘ। নিরস্ত্র নাগরিকের ওপর এসকেএস, টাইপ-৫৬ ও বিডি-০৮ বন্দুক দিয়ে ৭.৬২ এমএম গুলি চালানোর প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছিল উচ্চ আদালতের সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। তবে এর মূল কারণ ছিল আরও গভীরে—ধ্বংসাত্মক, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থার ফলে সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক বৈষম্য।
জাতিসংঘের প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রচ্ছদে স্থান পায় হাসিনার পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারানো সেই আলোচিত গোলাম নাফিজের ছবির স্কেচ, যেটি তুলেছিলেন ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদ। সেই ছবিতে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ নাফিজের নিথর দেহ পড়ে আছে রিকশার পাদানিতে। তার মাথা রিকশার বাইরে ঝুলন্ত প্রায়। মুখ আকাশের দিকে। রিকশাচালক তাকে উত্তাল সড়ক থেকে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই স্কেচসহ প্রতিবেদনের চুম্বকাংশ জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) ফেসবুক পেজে, যা আরও আবেদন তৈরি করেছে।
অপরাধীদের দেশে ফেরানোর পথ বাতলে দিলেন জাতিসংঘ দূত
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। প্যানেল সদস্য হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান ররি মাঙ্গোভেন, মানবাধিকার কর্মকর্তা জ্যোৎস্না পৌদ্যাল ও প্রধান মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি।
এসময় ভলকার তুর্ক বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় অভিযুক্তরা যেন দায়মুক্তি না পায়। এই অভিযুক্তদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি এসময় বিদেশে পলাতক অপরাধীদের দেশে ফেরানোরও উপায় বাতলে দেন। তুর্ক বলেন, যদি অপরাধী দেশের বাইরে থাকে, তখন ‘ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশন’ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে যে দেশে অপরাধী অবস্থান করছে তাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙঘনের অপরাধের বিচার করতে সম্মত হতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বলতে পারে।
বিশ্বমিডিয়ায় হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর এ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে খবর প্রকাশ বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন, আল জাজিরা, টাইমস অব ইন্ডিয়াসহ প্রায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
এর মধ্যে বেশিরভাগই হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা সামনে নিয়ে আসে। বিবিসির শিরোনাম ছিল—‘বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের দমন-পীড়ন মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটে থাকতে পারে: জাতিসংঘ’; আল জাজিরার শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশের বিগত সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী হতে পারে, এমনটি বলছে জাতিসংঘ। ’ রয়টার্সের প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়— ‘বাংলাদেশে বিক্ষোভ দমন অভিযানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবেদন দিয়েছে জাতিসংঘ। ’
বিশ্বমিডিয়ার খবরের সুবাদে হাসিনার নৃশংসতার খবর দ্রুত এবং ব্যাপক পরিসরে বৈশ্বিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশু, নারীসহ নিরীহ লোকদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র প্রয়োগের নিন্দা জানায় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন হাসিনার নৃশংসতার বৈশ্বিক দলিল
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের প্রচলিত প্রতিবেদন নয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংস্থার পর্যবেক্ষণ, যা হাসিনার সরকারের নৃশংসতার বৈশ্বিক দলিল হয়ে থাকবে। গোটা বিশ্বই বাংলাদেশের সেই অভ্যুত্থানকালের ঘটনাকে এই পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে দেখবে।
এরই মধ্যে ইউনিসেফের মতো সংস্থা জাতিসংঘের সেই প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে বিবৃতি দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট আজমপুরে একটি ১২ বছর বয়সী বালক অন্তত এক ডজন মরদেহের সাক্ষী। সে ‘বৃষ্টির মতো’ পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়েছে। এই ঘটনাগুলো অবশ্যই আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলবে। ইউনিসেফ বাংলাদেশ শিশুদের সঙ্গে ‘আর কখনো এমনটি যেন না ঘটে’ তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানিয়েছে।
হাসিনার রাজনীতির শেষ, আওয়ামী লীগের পথচলাও কঠিন
রাজনীতি পর্যবেক্ষকদের ভাষ্যে, জাতিসংঘের এই প্রতিবেদন সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে যেমন অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করালো, তেমনি কঠিন করে ফেল আওয়ামী লীগেরও পথচলা। এখন আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে হলে তাদের অভ্যুত্থানকালীন ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ এবং অভিযুক্তদের পেছনে ঝেড়ে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বাংলানিউজকে বলেন, আমার মনে হয়, এটা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটা বড় রকমের ‘সেট ব্যাক’ হয়ে গেল। এটা বড় রকমের এভিডেন্স হয়ে গেল। এই রিপোর্টটা আন্তর্জাতিক মহলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যখন এটাকে দেখবে সরকারপ্রধান বা অন্যান্য অর্গানাইজেশনের যারা প্রধান আছেন তারা খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। অতীতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন, আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। ফলে শেখ হাসিনার জন্যও এই বিষয়টি পজিটিভ কিছু আনবে না। তার জন্য বিষয়টি আইনগতভাবে বা রাজনৈতিকভাবে কোনো রকম সুবিধাজনক অবস্থান করবে না।
সাহাব এনাম আরও বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের যে ভূমিকাটা ছিল সেটার বিষয়ে এখানে যথেষ্ট ডক্যুমেন্টশন, তথ্য-উপাত্ত, প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনীতিতে ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে গেছে।
আয়নাঘরের আলামতে ঘৃণা-বিস্ময়
এদিকে, জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের দিন হাসিনার সরকারের গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের নানা আলামত সামনে আসায় শুধু বাংলাদেশে নয়, পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতেও বিস্ময় ছড়িয়েছে, বাড়ছে দলটির বিষয়ে ঘৃণাও।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন এবং কুখ্যাত আয়নাঘর নামে পরিচিত শেখ হাসিনা সরকারের গোপন টর্চার সেল নিয়ে আবেগঘন একটি লম্বা ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন ভারতীয় সাংবাদিক অর্ক দেব। তার পোস্টে লেখা হয়েছে, যখন আয়নাঘরের ছবি ভিডিও সামনে আসছে আমরা কি এরকম হয়েই থাকে বলে মানবতা বিরোধী ফ্যাসিস্ট প্রকল্পকে বৈধতা দেব? আমার সন্তান প্রাণপ্রিয়, কিন্তু অন্যের সন্তানের সঙ্গে এমনটা হতেই পারে? দ্বিচারিতা নয় তো এই ভাবনা? আমার তাৎক্ষণিক ঘৃণার চোটে আসলে ইউএপিএর মতো দাসত্ব শৃঙ্খলকেও আমি মান্যতা দিয়ে ফেলছি? এভাবে কত ছিদ্র আটকানো সম্ভব হবে? জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, জুলাই আগস্টে শিশুদের টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, বাহিনীর অস্ত্রে মৃত ১৪০০, তার মধ্যে শিশু ১১৮। বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ হাসিনার নির্দেশেই। ওএইচসএইচআর ১২৭ পাতার রিপোর্টে র্যাব, এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশও করেছে। প্রশ্ন হলো, কত মুখ ঘুরিয়ে থাকব? আমি অন্ধ হলে কি প্রলয় বন্ধ হবে? জাতিসংঘকেও এবার বলব বায়াসড?
আয়নাঘর ঘুরে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে লেখেন, আমরা গুম এবং আয়নাঘরে বিনা বিচারে বন্দিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবোই। আমরা এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা নির্মাণ করতে চাই যেখানে আর কখনো কোনোদিন বাংলাদেশের মাটিতে এমন ঘৃণ্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি না হয়।
আয়নাঘর নিয়ে সাদিকুর রহমান খান নামে একজনের একটি পোস্ট শেয়ার করে হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন, হয় আওয়ামী লীগ থাকবে না-হয় আমরা থাকবো।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নৃশংসতার কথা তুলে ধরে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখা হয়েছে, লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আর কোনো যদি-কিন্তু নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫
এমইউএম/এমজে/জেএইচ