সব লুটে ডাকাতরা বলল, ‘যা তোকে ছেড়ে দিলাম,


পাবনা: মধ্যরাতে অস্ত্র হাতে প্রশাসনের পোশাক পরিহিত এক দল লোক ঢুকলো ফ্ল্যাটের ভেতরে। এরপর বাড়ির কর্তার হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফ্ল্যাটের আসবাবপত্রের তালা ভেঙে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ যা পেল লুট করলো।

ডাকাতি শেষে ভুক্তভোগীর হাতকড়া খুলে ডাকাতদলের সদস্যরা বলেন, ‘যা তোকে ছেড়ে দিলাম থানাতে নিলাম না’।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৩টার দিকে পাবনা পৌর এলাকার দীলালপুর পাথরতলা মহল্লায় কমরেড জাকিরের ফ্ল্যাটে এ দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। লুট হওয়া স্বর্ণ ও অর্থের পরিমাণ জানা যায়নি।  


ডাকাতির সময় ডাকাতদল আশপাশের প্রায় সব ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল, যাতে ভুক্তভোগীর সহায়তায় কেউ বের হতে না পারেন। এই ধরনের পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।


ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগী ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী প্রবীণ রাজনীতিবিদ কমরেড জাকির হোসেন বলেন, প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে মধ্যরাতে প্রধান গেটের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে ডাকাতদল। প্রথমে ফ্ল্যাটের নিচতলার ভাড়াটিয়ার বাসায় ঢোকে। এর পর দ্বিতীয় তলায় আমার ফ্ল্যাটে আসে। প্রথমে প্রশাসনের পরিচয় দিয়েছিল। আমাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে বাড়িতে টাকা-পয়সা, সোনাদানা কি আছে বের করে দিতে বলে। যেহেতু পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিল না, তাই আলমারির চাবির বিষয়টি আমার জানা ছিল না। প্রতিটি রুমে প্রবেশ করে আলমারি ভেঙে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছেন তারা। এর পর তৃতীয় ও সবার ওপরে চতুর্থ তলায় সাবেক ডেপুটি স্পিকারের পরিবার বসবাস করতেন।  আমরা এই বাড়ির ভাড়াটিয়া। ওই ফ্ল্যাটের লকতালা ও দরজা ভেঙে আলমারি খুলে কি কি নিয়েছে সেটি আমি বলতে পারছি না।  




তিনি বলেন, সব লুট করে ভদ্রলোকেরা যাওয়ার সময় বেশ মানবতা দেখিয়ে গেছেন। হাতকড়া খুলে বেশ প্রশংসা করে তারা বলছিল, ‘যা তোকে ছেড়ে দিলাম থানাতে নিলাম না’। এটি কত বড় আতঙ্কের বিষয় একটি বার ভাবুন। সকালে পুলিশকে বলেছি, তারা এসে তদন্ত করছেন। প্রতিবেশীদের গেটে গেটে তালা দেওয়া ছিল। কেউ যে বের হবে তার উপায় নেই।  


ডাকাতদলের কাউকে চিনতে পেরেছেন কি না প্রশ্নে জাকির হোসেন বলেন, না, তবে এই কাজটি বাইরের কেউ ঘটিয়েছে বলে এটা আমার মনে হয় না। প্রশাসন তদন্ত করে দেখবে এবং দ্রুতই ডাকাতচক্রকে মালামালসহ গ্রেপ্তার করবেন এটাই আমাদের চাওয়া।  


প্রত্যক্ষদর্শী একই বাড়ির নিচতলার ভাড়াটিয়া মো. সবুজ হোসেন বলেন, ডিবি পরিচয় দিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে তারা। ডাকাত দলের সদস্যরা রঞ্জনের ফ্ল্যাট কোনটি জানতে চেয়েছিল। আমাদের বাসার ভেতরে ঢুকেছে তবে কিছু নেয়নি। ওপরে ভাড়া থাকেন জাকির ভাই। তার বাসায় গিয়ে তাকে ডেকে তুলে আমাকে নিচে নিয়ে এসে আটকে রাখে। আমাদের সবার মোবাইল ফোন প্রথমেই নিয়ে নেন তারা। এর পর তৃতীয় ও চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের দরজার লকতালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আলমারির তালা কেটে সব নিয়েছে। তাদের কাছে দরজার তালা কাটার সব যন্ত্রই ছিল। পরিবার নিয়ে ভয়ের মধ্যে রয়েছি। কোন বিপদের মধ্যে পড়লাম আমরা! 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাকাতি হওয়া ওই গলিতে পূর্ব থেকেই মাদকাসক্তদের আনাগোনা রয়েছে। সাবেক ডেপুটি স্পিকার টুকুর স্ত্রী সাবেক মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রয়াত লুৎফনেছা ডাকাতের কবলে পড়া বাড়িটি কিনেছিলেন। তৎকালীন সাবেক ডেপুটি স্পিকার পাবনা কোর্টের আইন পেশায় নিযুক্ত ছিলেন। এই বাড়িটি দীর্ঘদিন জেলা পাসপোর্ট অফিস হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। গলিটি বেশ নীরব। চারিদিক দিয়ে দ্রুতই বের হওয়া যায়। তবে এখন বেশিরভাগ বাসা ও সড়কে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। প্রশাসনের পরিচয়ে এমন ধরনে কাজ আর যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে নতুবা প্রশাসনের অপরাধ দমন অভিযান বাধাগ্রস্ত হবে। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস হারাবে প্রশাসনের প্রতি।


ঘটনার বিষয়ে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম  বলেন, রাতভর ডিউটি করেছি। এই ধরনের ঘটনা সত্যই অপ্রত্যাশিত। প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে চুরি বা ডাকাতি করা এটা আমরা হতে দিতে পারি না। ঘটনার শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনের সকল দপ্তর মাঠে কাজ করছে জেলা পুলিশ স্যারের নির্দেশে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি আমরা। এই এলাকার সমস্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।


বাংলাদেশ সময়: ০১০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫

এসএএইচ



Tags:

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

Daily Deals
Logo
Shopping cart