ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধি জনজীবনে নাভিশ্বাস


ঢাকা: বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। আয় দিয়ে মানুষ ব্যয় সামলাতে পারছে না, জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

এরই মধ্যে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর ফলে আরেক দফা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র অবস্থা তৈরি হয়েছে।

পোশাক, মিষ্টি, টিস্যু, এলপি গ্যাস, সস, বিস্কুট, চশমার ফ্রেম ও গ্লাস, মোবাইল ফোনের কল রেট, ফল ও বিদেশ ভ্রমণের ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক কর বৃদ্ধি ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এতে মানুষের জীবন নির্বাহে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। প্রভাব পড়ছে উৎপাদনেও। এর ফলে নিত্যদিনের খরচ আরও বেড়ে যাবে, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।


অর্থনীতিবিদ, ভোক্তা অধিকার সংগঠনের নেতা ও ভোক্তারা বলছেন, নতুন করে ভ্যাট ও সম্পূরক কর উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে মানুষ উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে নিস্তারের পথ খুঁজছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনগণ আশা করেছিল, অন্তর্বর্তী সরকার কঠোর হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে, মানুষের জীবন নির্বাহের ভোগান্তি কমাবে। কিন্তু কমানোর পরিবর্তে নতুন করে আরও বাড়ানো হলো।


নতুন করে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক কর বসানোর ফলে সরাসরি পণ্যগুলোর দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজারের অন্যান্য পণ্য ও সেবার দাম বাড়ানোর অজুহাত তৈরি হয়েছে। এতে মানুষের জীবন কঠিন হবে। এটা সরকারের একটি অদূরদর্শী ও দায়িত্বহীন কাজ বলে মন্তব্য করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।


তিনি বলেন, উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে এমনিতেই জীবনযাপন কঠিন ছিল। আগেও জিনিসপত্রের দাম বেশি ছিল। এখন এটা আরও বাড়বে। আগে যেসব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, সেসব পণ্যের দামও আবার বাড়বে। অজুহাত তৈরি হলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, কমে না। যেসব জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই, সেসব জিনিসপত্রেরও দাম বাড়ে।


আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, আগের সরকারের সময়ে সামাজিক বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছিল। দেশের বেশির ভাগ মানুষ, যাদের আয় কম তাদের আয়ের পুরো নিয়ে গেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে যাদের আয়-রোজগার বেশি তাদের কাছ থেকে সেই হারে রাজস্ব নিতে পারেনি। এর ফলে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে।


এই সরকার জনপ্রত্যাশার সরকার। মানুষে প্রত্যাশা—বৈষম্য হয়, ভোগান্তি হয়, এমন সিদ্ধান্ত সরকার নেবে না। কিন্তু সরকার ভুল বয়ান করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, তারা একই ভাবে চলছে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যক্রমে কোনো তফাৎ এই সরকার করছে বলে মনে হচ্ছে না। আর আইএমএফ এইই ধরনের (অত্যাবশ্যক পণ্যে রাজস্ব বাড়িয়ে সরকারের আয় বাড়ানো) পাইকারি সিদ্ধান্ত দেয়। আইএমএফ-এর ঋণ পেতে শর্ত মানতে হয়েছে। এই শর্ত মানতে গিয়ে বা নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে গিয়ে এটা করছে।


এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, যেসব সম্পদশালীর ওপর কর ধার্য  করার কথা ছিল, তাদের ওপর কর ধার্য  না করে; লুটপাট হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব ছিল, সেগুলো না করে জনগণের ওপর পাইকারি হারে বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে; আগের সরকারের মতোই ভূমিকা পালন করছে।


শতাধিক পণ্যের দাম বাড়ানোর যে প্রক্রিয়া, এতে মানুষের কষ্ট বাড়বে বলে মনে করেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পণ্যের দাম বাড়বে, এর ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। এতে মানুষের জীবন নির্বাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই সময়ে সরকারের এটা যথাযথ উদ্যোগ হয়নি।


যদিও সরকারের মুখপাত্র বলছেন, এতে পণ্যের দামে কোনো প্রভাব পড়বে না। এটা সেই ধরনের কথা, যা আগের সরকারের লোকজন বলতেন। আগের সরকারের লোকজন যেভাবে কথা বলতেন, এখনকার সরকারের লোকজনও সেই কথা বলছেন। আগের মন্ত্রী যে স্টাইলে কথা বলতেন, এখন সরকারের লোকজনও তাদের শেখানো পথে তাদের মতো করেই কথা বলছেন, বলেন  ক্যাবের এই সংগঠক।


তিনি আরও বলেন, এই দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবে মানুষের জীবন নির্বাহে মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে গেছে, কষ্ট আরও বাড়বে। এজন্য সরকারের এ সম্পর্কে চিন্তা করার ক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা করা দরকার।


বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

জেডএ/এমজেএফ

 



Tags:

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

Daily Deals
Logo
Shopping cart